SAJID PERVEZ
ভারতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার যে অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানকার বেশ কয়েকশো মানুষ আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। ঘর জ্বলেছে হিন্দু – মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই।তারা বলছেন, ঘরের সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে – নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে এদের।
হুগলী জেলার চন্দননগর লাগোয়া তেলেনিপাড়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দু`দিন পরে আজ সেখানে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, তবে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। পুলিশ বলছে এখনও পর্যন্ত ১২৯কে তারা গ্রেপ্তার করেছে, আটক করা হয়েছে আরও ২১ জনকে।
চটকল এলাকার কয়েকশো ঘর দাঙ্গায় জ্বলে পুড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ এখন স্থানীয় স্কুল বা আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আর তার মধ্যেই কেউ কেউ নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে খুঁজে দেখছেন যে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না।
দাঙ্গা হয়েছে যে এলাকায়, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা আফতাব সুলতানের কয়েকটি ঘর পর থেকেই শুরু হয়েছিল ঘর-বাড়ি পোড়ানো।
সেই সব পোড়া ঘরে তিনি আজ গিয়েছিলেন।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন,” ঈদগাহ ময়দানের কাছে আমি যেখানে থাকি, তার পাঁচটি বাড়ি ছেড়ে পরপর তিনটি বাড়ি একদম পুড়ে গেছে। সবগুলোই মুসলমানদের ঘর। দিল্লির দাঙ্গায় যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে টিভির খবরে দেখেছি, যেমন অ্যাসিড, পেট্রল আর গ্যাস সিলিন্ডার – এখানেও সেই সবের ব্যবহারের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।”
“কোনও বাড়িতে ঈদের পরে বিয়ের ঠিক হয়ে আছে, তাই গয়না রাখা ছিল – সব পুড়ে গেছে। জমিয়ে রাখা টাকার গোছার পোড়া অংশও দেখেছি। কোনও কিছুই বাকি নেই ওইসব ঘরে,” জানাচ্ছিলেন মি. আফতাব সুলতান।
হিন্দু এলাকার মধ্যে যেমন মুসলমানদের ঘর-বাড়ি জ্বলেছে, তেমনই মুসলমান প্রধান এলাকাতে হিন্দুদের ঘরও জ্বলেছে।
যেসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি জ্বলেছে, তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।
মি. সুলতানকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম কারা জ্বালালো বাড়ি-ঘর।
“মুসলমান প্রধান এলাকায় যে কয়েক ঘর হিন্দুরা থাকত, তাদের ঘর মুসলমানরা জ্বালিয়েছে, আবার একই ভাবে হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলমানদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর – আগুন লাগানো এসব করেছে হিন্দুরা। আমি নিজে মুসলমান হলেও এই তথ্য স্বীকার করতে দ্বিধা করব না। দাঙ্গা পরিস্থিতিতে যার যেখানে শক্তি বেশি, তারাই দুর্বলের ওপরে আক্রমণ করে,” জানাচ্ছিলেন আফতাব সুলতান।
ওই অঞ্চলেরই বাসিন্দা মুহম্মদ আইনুল হক।
একটি দোকানে কাজ করতেন, কিন্তু শারীরিক সমস্যার জন্য সাত মাস কোনও রোজগার নেই।
বস্তি এলাকা থেকে উঠে এসেছিলেন একটি সস্তার ফ্ল্যাটে – শান্তিতে থাকবেন বলে।
কিন্তু সেই ফ্ল্যাট এখন বিধ্বস্ত, আশ্রয় নিয়েছেন মেয়ের বাড়িতে।