স্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাব: (Health effects of tobacco) বলতে তামাকের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মানব স্বাস্থ্যের উপর এর যে ক্ষতিকর কাজ রয়েছে সেগুলোকে বুঝায়। প্রাথমিকভাবে গবেষণা মূলত তামাক ধূমপান বিষয়ের উপর করা হয়েছে।১৯৫০ সালে Richard Doll নামক বিজ্ঞানী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যেখানে তিনি ধূমপান ও ফুসফুস ক্যান্সারের একটি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।এর ঠিক চার বছর পর ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি নামক আরেকটি গবেষণা প্রকাশ করা হয় যেটি চল্লিশ হাজার ডাক্তারের কুড়ি বছর ধরে করা গবেষণার ফলাফল। সেখানে ধূমপানের সাথে ফুসফুসের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় যার উপর ভিত্তি করে সরকার ঘোষণা করে যে ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায়।
সাধারণ সিগারেটে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি ভেবে অনেকেই মেন্থল সিগারেট খান৷ কিন্তু গবেষণা বলছে, ভিন্ন কথা৷ মেন্থল সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে এ তথ্য৷
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এফডিএ বিভিন্ন গবেষণা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে৷ তবে তারা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি এর উৎপাদন কমানো বা এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা৷ কেননা সিগারেট ব্যবসায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মিন্ট সিগারেট৷
তবে মেন্থল সিগারেটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত কিনা তা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার হেল্থ কমিউনিটি, তামাক শিল্প এবং অন্যান্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রশাসন৷ এফডিএ জানিয়েছে, যুব সম্প্রদায়ের কাছে মেন্থল সিগারেট বেশ জনপ্রিয় ।
গবেষণায় দেখা গেছে সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিরাজমান।২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের ১৯২টি দেশে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের (পরোক্ষ ধূমপান) প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৬,০০,০০০ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ১,৬৫,০০০-ই হলো শিশু। শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নিউমোনিয়া ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে। এছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগও দেখা দেয়। গবেষণায় এও বেরিয়ে এসেছে যে, পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় নারীর উপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮১,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে পরিচালিত এজাতীয় আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিলো যে, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৪০% শিশু, ৩৩% অধূমপায়ী পুরুষ এবং ৩৫% অধূমপায়ী নারী রয়েছেন। তাতে এও ফুটে ওঠে যে, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষ।