মসজিদ না মিউজিয়াম:-ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়া নিয়ে বিতর্ক চরমে

0
Spread the love

একদা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রধান গির্জা, পরে উসমানি খেলাফতের প্রধান মসজিদ, আধুনিক তুরস্কের ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়া এখন অপেক্ষা করছে এটা মিউজিয়াম থাকবে না মসজিদে রূপান্তরিত হবে।

১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও নিপুন কারুকার্যমন্ডিত বিরাটাকার গম্বুজ সমন্বিত ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়া, আজ কালের স্রোতে ঘুরপাক খেয়ে এক বিরাট প্রশ্নের সামনে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। এই অপূর্ব অতি চমৎকার স্থাপত্যটি প্রায় ৯০০ বছরের বেশি সময় ধরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রধান গির্জা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। পরে বাইজানটাইন সাম্রাজ্য উসমানী খিলাফতের অধীনে চলে আসলে মুসলিমরা এই স্থাপত্যটি ঈশ্বরের উপাসনার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। প্রায় ৫০০ বছর মুসলিমরা এটিকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। আরোও পরে কামাল আতাতুর্কের আধুনিক তুরস্কে এটি মিউজিয়ামে পরিণত হয় আর এখন পর্যন্ত এটি মিউজিয়াম হিসেবেই থেকে গেছে। এই অভূতপূর্ব চমৎকার দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যটি নিয়ে হঠাৎ করে তুরস্কের প্রতিটি কোণায় গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে আর এর নেপথ্যে রয়েছে দেশের রাষ্ট্রনায়ক রিসেপ এরদোগানের একটি ঘোষণা।তিনি ঘোষণা দিয়েছেন খুব শীঘ্রই হাজিয়া সোফিয়াকে তার পূর্বের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া  হবে অর্থাৎ সেটিকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরিত করা হবে।

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এই একটি ঘোষণায় শতাব্দী প্রাচীন স্থাপত্যটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। শুধু তুরস্কের রক্ষণশীল বা জাতীয়তাবাদী অথবা ধর্মীয় সংগঠনগুলি এটা নিয়ে বিতর্ক করছে তা নয় বরং পাশের দেশ  ইতালি ও গ্রীস এরদোগানের এই ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তুরস্কের রক্ষণশীল সংগঠনগুলি মনোরম এই স্থাপত্যটি কে ইউনেস্কোর নিয়ম অনুযায়ী এটিকে মিউজিয়াম হিসেবে রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী অন্যদিকে দেশের শাসক গোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলি এটিকে তার পূর্বের অবস্থায় অর্থাৎ মসজিদে রূপান্তরিত করার জন্য বদ্ধপরিকর।

আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তুর্কির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত(টিসিএস) এই ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা শুরু করবে এবং আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তুরস্কের একটি ধর্মীয় সংগঠন, হাজিয়া সোফিয়ার মসজিদে রূপান্তরের জন্য একটি পিটিশন দাখিল করে এবং তাতে তারা জোর দিয়ে বলেন আধুনিক তুরস্কের রূপকার আতাতুর্ক পাশা ১৯৩৪ সালে মসজিদটিকে বলপূর্বক মিউজিয়ামে পরিণত করেন।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোগান ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়ার স্ট্যাটাস পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা আগেই উল্লেখ করেছিলেন তবে তিনি এখন কিছুদিন সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবেন। সর্বোচ্চ আদালত যদি মসজিদে রূপান্তরের পক্ষে রায় দেয় তবে সেটি প্রেসিডেন্টের জন্য সুখবর বয়ে নিয়ে আসবে আর যদি এর উল্টো হয় তবে প্রেসিডেন্ট কে নিজস্ব বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে হাজিয়া সোফিয়ার স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য, যেটা প্রেসিডেন্টের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।

 

ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়ার স্ট্যাটাস পরিবর্তন হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে এখনই বিভিন্ন রকম বিরূপ মন্তব্য ধেয়ে আসতে শুরু করেছে তুর্কি প্রেসিডেন্টের দিকে। গ্রীক বিদেশ মন্ত্রী নিক্স ডেন্ডিয়াস তার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ধমকের সুরে বলেছেন,

“আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট এরদোগান এমন কিছু করবেন না যাতে করে তুরস্কের বড় কিছু ক্ষতি হয়”একই রকম ভাবে  ইতালি থেকেও একটু বাঁকা মন্তব্য এসেছে যেখানে বলা হচ্ছে হাজিয়া সোফিয়া মিউজিয়াম থেকে মসজিদে রূপান্তরিত হলে হাজার হাজার খ্রিস্টান মানুষ মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলে যাবে। যদিও এরদোগান প্রশাসন এসব মন্তব্যকে কোন পাত্তা দিতে চান না।

তুর্কি মিডিয়া হুরিয়ত থেকে জানা যাচ্ছে, তুরস্কের প্রশাসন হাজিয়া সোফিয়া মিউজিয়ামের স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে সেটাকে মসজিদে রূপান্তরিত করলেও সেখানে পর্যটকদের  প্রবেশে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হবে না বরঞ্চ আগের মতই সেখানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা এসে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যটির সৌন্দর্য ও কারুকার্য উপভোগ করতে পারবেন।

যদিও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের উপর প্রবল চাপ তৈরি করা হচ্ছে যাতে তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। দেশের বিরাট সংখ্যক লোক এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের পাশে আছে বলে তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে আগামী ১৫ই জুলাই সরকারি ছুটির দিন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হাজিয়া সোফিয়া মিউজিয়াম মসজিদে রূপান্তরিত হলে অবাক হবেন না যেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here