টি নিউজ ওয়ার্ল্ড,নিজস্ব সংবাদদাতা, আজ মুম্বাই পুলিশের জেরার মুখে অর্ণব গোস্বামী, টিআরপি কেলেঙ্কারিতে একাধিক ধারায় মামলা ! রিপাবলিক টিভির এডিটর-ইন-চিফ অর্ণব গোস্বামীকে জেরা করবে মুম্বই পুলিশ। এই মামলার তদন্তে অর্ণবকে এর আগে ১৬ অক্টোবর হাজিরা দিতে বলেছিল মুম্বই পুলিশ। কিন্তু, আইনজীবীর মারফত্ আবেদন জানিয়ে ওই দিন জেরা এড়িয়ে যান রিপাবলিক টিভির প্রধান সম্পাদক। পরিবর্ত দিন হিসেবে ২৪ অক্টোবর, শনিবার ফের তাঁকে মুম্বই পুলিশের সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) কেলেঙ্কারির জেরে রিপাবলিক চ্যানেল ও তাঁর সিনিয়র কর্তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় এফআইআর করে মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। বিশ্বাসভঙ্গ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা-সহ আইপিসির একাধিক ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়।
এফআইআরে রিপাবলিক টিভি ছাড়াও আরও দু’টি আঞ্চলিক টিভি চ্যানেলেরও নাম রয়েছে। এফআইআরে বলা হয়, আরও বেশি বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য এই চ্যানেলগুলি টিআরপি কারচুপি করেছে। এই মামলায় ইতিমধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। তাদের একজন একটি এজেন্সির প্রাক্তন কর্মী। সেই এজেন্সি রেটিং জানার জন্য ‘পিপলস মিটার’ বসাত।
সম্প্রতি সর্বভারতীয় ইংরেজি চ্যানেল রিপাবলিক টিভি দাবি করে, টিআরপি রেটিংয়ে তারাই দেশের শীর্ষে। মুম্বই পুলিশের দাবি, কারচুপি করে ট্যাম রেটিং পয়েন্ট বাড়িয়ে দেখায় সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর চ্যানেল। সেজন্য রিপাবলিক টিভির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। অর্ণব গোস্বামী ছাড়াও এফআইআরে নাম থাকা দুটি আঞ্চলিক টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধিদেরও পুলিশ জেরা করবে।
মুম্বই পুলিশের কমিশনার পরমবীর সিং সম্প্রতি জানান, অভিযুক্ত চ্যানেলগুলির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে তদন্ত হবে। বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্যই কি অসাধু উপায় অবলম্বন করে চ্যানেলগুলি? খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
মুম্বইয়ের পুলিশ প্রধান স্পষ্ট বলেন, অভিযুক্ত চ্যানেলের ম্যানেজমেন্টের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের সম্পর্কে তদন্ত করা হবে। তাঁরা যত সিনিয়রই হোন, তদন্ত থেকে রেহাই পাবেন না। যদি দেখা যায়, কেউ অসাধু পথে অর্থ সংগ্রহ করেছেন, তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
পরমবীর সিং বলেন, ‘অনেক সময় রেটিং বাড়িয়ে দেখানো হয়। এ ভাবে চ্যানেলগুলি বিজ্ঞাপন বাবদ বেআইনি ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে। একে জোচ্চুরি বলেই ধরা হবে।’ যদিও রিপাবলিক টিভির প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীর বক্তব্য, ‘পরম বীর সিং রিপাবলিক টিভির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। যেহেতু সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু তদন্তে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রিপাবলিক টিভি, সে কারণেই এ সব বলছেন তিনি।’ মুম্বই পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করার হুমকিও দিয়েছিলেন অর্ণব।
২০১৭ সালের মে মাসে রিপাবলিক টিভির সম্প্রচার শুরু হয়। তার দুই প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অর্ণব গোস্বামী ও রাজীব চন্দ্রশেখর। ২০১৯ সালে চন্দ্রশেখর তাঁর অংশের শেয়ারের এক বড় অংশ অর্ণবকে বেচে দেন। প্রথমে চন্দ্রশেখরের এশিয়ানেট নিউজ এই চ্যানেলে অর্থ জোগাত।
প্রয়াত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের বন্ধু সন্দীপ সিংও ২০০ কোটি টাকার মানহানির মামলার নোটিশ ধরিয়েছে রিপাবলিক টিভিকে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারায় অর্ণব গোস্বামী এবং রিপাবলিক টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন তিনি। নোটিশে অভিযোগ করা হয়, তাঁকে সুশান্ত হত্যার ‘মূল ষড়যন্ত্রী’ এবং ‘হত্যাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন চ্যানেলের এডিটর-ইন-চিফ অর্ণব গোস্বামী। ১৪ অক্টোবর আইনজীবী রাজেশ কুমার মারফত পাঠানো ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে তাদের পোর্টাল থেকে সমস্ত আপত্তিকর খবর-ভিডিয়ো ফুটেজ সরিয়ে দিতে হবে।
সন্দীপ সিংয়ের আরও অভিযোগ, রিপাবলিক টিভির একজন তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। চ্যানেলকে অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য না-করলে তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের খবর প্রচার করা হবে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও অগস্ট মাসের শেষ দিকে এক রিপোর্টার তাঁর বাড়িতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষী ও বাড়ির কাজের লোকদের হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ করেন সন্দীপ সিং।
এদিকে, শুক্রবার রিপাবলিক টিভি -র সম্পাদকীয় টিমের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও একটি মামলা রুজু করে মুম্বই পুলিশ। সূত্রের খবর, মুম্বই পুলিশ সম্পর্কে হীন ধারণা তৈরির অভিসন্ধির অভিযোগ আনা হয়েছে রিপাবলিকের সম্পাদকীয় টিমের বিরুদ্ধে। পুলিশ আইন (১৯২২)-এর ৩(১) ধারা ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় এই অভিযোগ দায়ের হয়েছে এনএম জোশি মার্গ থানায়।
সূত্রের খবর, সবমিলিয়ে রিপাবলিক টিভি চ্যানেল ও তাঁর কর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত চারটি ফৌজদারি মামলা জারি করেছে মুম্বই পুলিশ। টিআরিপি কেলেঙ্কারি-সহ এই মামলাগুলি বাদে অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে আর দুটি এফআইআর হয়েছে দুটি থানায়।