নিজস্ব প্রতিবেদন ; টি নিউজ ওয়ার্ল্ড:- বরবটির চাষাবাদ পদ্ধতি। আমাদের দেশে বরবটি একটি জনপ্রিয় সবজি। এই সবজি বর্তমানে বার মাস কালই পাওয়া যায়। আমাদের দেশের কৃষকেরা উন্নত জাতের বরবটি চাষ করে। যেমন তাদের চাহিদা মিটাতে পারেন, তেমনি আবার বাজারে বিক্রয় করে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারে। বরবটি আমিষসমৃদ্ধ একটি সবজি। এই সবজি চাষ আমরা বসতবাড়িতেও করতে পারি। প্রায় সারা বছরই এই সবজি চাষ করা যায়। নিম্নে বরবটি চাষের বিভিন্ন দিক-নিদের্শনা দেওয়া হল:
প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন: অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় বরবটি ভালো জন্মে। তবে খুব শীতে বরবটির চাষ বেশী ভাল হয় না। কারন শীতকালে বরবটি গাছের বৃদ্ধি কম হয় ও ফল কম ধরে। বরবটি উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের ফসল। আগেই বলা হয়েছে বরবটি এখন বার মাসই চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি সব সময় চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে বরবটির চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
বরবটির বিভিন্ন জাত : বিএআরআই কর্তৃক অবমুক্তায়িত জাত বারি বরবটি ১। এছাড়াও বেশকিছু বেসরকারী বীজ কোম্পানী কর্তৃক বাজারজাতকৃত জাতসমূহ নিন্মরূপঃ
সুপ্রীম সীড কোম্পানী লিমিটেড
উফশী বরবটি – কেগর নাটকী
এটি উজ্জ্বল গাঢ়, সবুজ, মোলায়েম এবং সুস্বাদু। প্রতিটি বরবটি ৫০-৬০ সেমিঃ লম্বা এবং একত্রে ২-৩টি ধরে। এই জাতটি লীফ স্পট, পাউডারী মিলডিউ, ডাউনি মিলডিউ রোগ সহনশীল। কেগর নাটকী বরবটি ডিসেম্বর ও জানুয়ারী ব্যতিত সারাবছর পাওয়া যায়। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ৮-১০ টন।
নামধারী মালিক সীডস (প্রাঃ) লিঃ
গ্রীন ফিল্ড :
এই জাতের বরবটির রং গাঢ় সবুজ। প্রতিটি বরবটি ১৮-২২ ইঞ্চি লম্বা এবং জাতটি লীফ স্পট, পাউডারী মিলডিউ, ডাউনি মিলডিউ রোগ সহনশীল। বীজ বপনের সময় মাঘ হতে চৈত্র মাস। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ১৫-২০ টন।
সাদা সুন্দরী :
এই জাতের বরবটির রং হালকা সবুজ। প্রতিটি বরবটি ১৮-২২ ইঞ্চি লম্বা এবং জাতটি লীফ স্পট, পাউডারী মিলডিউ, ডাউনি মিলডিউ রোগ সহনশীল। বীজ বপনের সময় মাঘ হতে চৈত্র মাস। বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ১৫-২০ টন।
গ্রীন লং
গ্রীন লং জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং দিবস নিরপেক্ষ জাত। এই জাতের বরবটির রং গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং ৫৫-৬০ সেমিঃ লম্বা। এটি মৃদু শীত সহনশীল, খেতে মোলায়েম এবং সুস্বাদু। ফাল্গুন মাস হতে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ৭-৮ টন।
লাল বাদামী :
জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং বরবটির রং লালচে বাদামী। বরবটি ৪৫-৫০ সেমিঃ লম্বা। এটি খেতে মোলায়েম এবং সুস্বাদু। ফাল্গুন মাস হতে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ৮-১০ টন।
বরবটি ওয়াই এল বি ৫৭০
জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং দিবস নিরপেক্ষ জাত। এই জাতের বরবটির রং উজ্জ্বল, গাঢ় সবুজ বর্ণের, সোজা এবং ৫৫-৬০ সেমিঃ লম্বা। খেতে মোলায়েম এবং সুস্বাদু। ফাল্গুন মাস হতে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪৫-৫০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ৬-৭ টন।
কেগর নাটকী :
কেগর নাটকী জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং বারমাসি। বরবটির রং গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং খেতে সুস্বাদু, লম্বায় ৫০-৬০ সেমিঃ। ফেব্রুয়ারী থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৫০-৫৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। এটি ভাইরাস সহনশীল জাত। একর প্রতি ফলন ৭-৮ টন।
লালবেনী :
লালবেনী জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং লাল রং এর। বরবটি ৪৫-৫০ সেমিঃ লম্বা এবং সুস্বাদু। ফেব্রুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। বীজের হার প্রতি শতাংশে ৩০-৪০ গ্রাম। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ১০-১২ টন।
তকি
জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং দিবস নিরপেক্ষ। উজ্জ্বল, গাঢ় সবুজ, মোলায়েম ও বরবটি ৫৫-৬০ সেমিঃ লম্বা এবং সুস্বাদু। মৃদু শীত সহনশীল। ফেব্রুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। বীজের হার প্রতি শতাংশে ৩০-৪০ গ্রাম। বীজ বপনের ৪৫-৫০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ৭-৮ টন।
বনলতা
বনলতা জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল, উচ্চ ফলনশীল এবং দিবস নিরপেক্ষ। বরবটি নরম, লম্বা, সোজা এবং হারকা সবুজ বর্নের। জীবন চক্রের শেষ সময় পর্যন্ত একই রকমের ফল দেয়। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। বীজের হার প্রতি শতাংশে ৩০-৪০ গ্রাম। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর প্রতি ফলন ৪-৫ টন
বরবটির চাষের সময়:
বরবটির বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রয়ারী থেকে জুলাই মাস। শীতকালে বরবটির বীজ বোনা উচিৎ নয়।
জমি তৈরি ও বীজ বপন:
বরবটি প্রায় সকল প্রকার মাটিতে এর চাষ ভাল হয়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে এটি সবচেয়ে ভাল হয়। চাষের জন্য জমি হতে হবে আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে মাটি। এর জন্য জমি ভালোভাবে কয়েক বার চাষ দিতে হবে। জমি পরিষ্কার করে ৪ থেকে ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হবে। তারপর মাটির উপরে বেড ও মাদায় তৈরি করে প্রত্যেক মাদায় ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে। হয়। বীজ বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে সারি হতে সারির দূরত্ব হতে হবে ২-৩ হাত এবং মাদা হতে মাদার দূরত্ব হতে হবে ১/২ হাত। একই সময় পলিব্যাগে কিছু চারা তৈরি করে রাখলে যেসব জায়গায় বীজ গজাবে না সেসব ফাঁকা জায়গায় পলিব্যাগে চারা রোপণ করে পূরণ করা যাবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি (শতকে ৪০ গ্রাম) বীজ লাগে।
বীজের হার:
প্রতি শতকে- ১.৫ গ্রাম, একরপ্রতি- ৩-৫ কেজি, হেক্টরপ্রতি- ৮-১০ কেজি হারে বীজ বপন করা হয়।
বীজ বপন দূরত্ব :
১.৫ মিটার বা ৫ ফুট দূরত্বে সারি করে সারিতে ২০-২৫ সেঃ মিঃ বা ৮-১০ ইঞ্চি দূরে দূরে ৪৫ সে:মি: (১.৫ ফুট) চওড়া, ৪৫ সে:মি: (১.৫ ফুট) গভীর গর্ত করে ৪-৫টি বীজ বুনতে হয়।
সার প্রয়োগ :
প্রতি গর্তে ১০ কেজি গোবর সার, ২০০ গ্রাম খৈল, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম মিউরেট অফ পটাশ সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে ৫/৭ দিন পর বীজ বুনতে হয়।
পরিচর্যা :
চারা ১৫-২০ সেঃ মিঃ ৬-৮ ইঞ্চি উচু হবার সাথে সাথে বাউনি ও মাচা দিতে হয়। ফেলন নামক খাটো জাতে বাউনি না দিলেও চলে। নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিস্কার করতে হয় এবং ৩/৪ দিন পর পর গাছের গোড়ায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হয়। গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ফসল সংগ্রহ :
বীজ বোনার দু’মাস পর বরবটি ধরে। সবজি হিসাবে ফল ধরার ৪-৫ দিন পর কচি বরবটি তুলতে হয় এবং ডালের জন্য পরিপুষ্ট বরবটি সংগ্রহ করতে হয়।
ফলন :
বরবটি প্রতি শতকে ৪০-৬০ কেজি, একরপ্রতি ৪-৬ টন ও হেক্টরপ্রতি ১০-১২.৫ টন। বীচি হিসাবে প্রতি শতকে ৩.২৫ কেজি, একরপ্রতি ৩২৫ কেজি, ও হেক্টরপ্রতি ৮০০ কেজি।