সারা ভারত কি এবার ফ্যাসিবাদের ছোবলে ?

0
Spread the love

নিজস্ব সংবাদদাতা টি নিউজ ওয়ার্ল্ডঃ সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী, যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতবর্ষের হিন্দুত্ববাদের জন্য বিপজ্জনক। তার অভিযোগ, এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য নাকি হিন্দুত্ববাদ তথা হিন্দু ইতিহাস ও হিন্দু দর্শন বিশ্বে যথার্থ স্থান পায়নি। আর এস এস- বিজেপির প্রবক্তারা প্রায়শঃ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আদর্শকে আক্রমন করে থাকেন। তারা ধর্মনিরপেক্ষ লেখক ও গবেষকদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। বিভিন্ন সময় কথায় কথায় তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে থাকেন। ভারতবর্ষ বিষয়ে তারা প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক তথ্য মানতে অস্বীকার করেন।

তারা নতুন আঙ্গিকে ইতিহাস সৃষ্টি করতে একাধিক ল্যাবরেটরি তৈরি করেছেন। তারা মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা ‘রাম রাজত্ব’ প্রতিষ্ঠার জন্য সব চেয়ে বড় বাধা। তবে, ইতিমধ্যে তারা হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। অনেকেই বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হতে সামান্য বাকি আছে।
গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কত প্রকার, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা দুষ্কর। পাশ্চাত্যে প্রচলিত গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে প্রাচ্যের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভিন্ন। খ্রীষ্টান ধর্মনিরপেক্ষ, হিন্দু ধর্মনিরপেক্ষ ও মুসলিম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র অভিন্ন নয়।

ভারতীয় গণতন্ত্র ও মার্কিন গণতন্ত্রও এক নয়। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ ও পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে সাদৃশ্যতা নেই। সত্য বলতে কি, প্রচলিত গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাশ্চাত্য সৃষ্ট। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট বিচার করে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সংস্করণ নির্মাণ করে চলেছে। তাই, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের গুণগত মান তথা স্ট্যান্ডার্ড নির্ণয় করা কঠিন। বস্তুত আদর্শ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা কোথাও কট্টর মৌলবাদী দ্বারা পণবন্দি। আবার কোথাও সামরিক জান্তা বা স্বৈরাচারী সরকার দ্বারা অবরুদ্ধ।

বস্তুত গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ উভয় দর্শন তরল পদার্থের মতো। যে পাত্রে রাখা হবে, সেরূপ ধারণ করবে। বিশ্বে বহু দেশ আছে, যে দেশে চরম স্বৈরাচারী ও উগ্র মৌলবাদী সরকার নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে। আবার বহু দেশ আছে সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ না হয়েও তুলনামূলক অধিক ধর্মনিরপেক্ষ।

বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এই মুহূর্তে ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের উদাহরণ যথেষ্ট। ভারতবর্ষ সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও বাস্তবে হিন্দু রাষ্ট্র, যেখানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সার্বজনীন ও সরকারি জমি দখল করে হাজার হাজার মন্দির ও বেদি নির্মিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পরে ভারতবর্ষের কোনো সার্বজনীন ও সরকারি স্থানে মসজিদ হয়েছে এমন নজির নেই। যদি কোথাও এরকম থেকে থাকে তাহলে তা অবশ্যই স্বাধীনতার পূর্বে। কারণ, বৃটিশ সরকার ভারসাম্য বজায় রাখতে গির্জা, মন্দির ও মসজিদ পাশাপাশি প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিত। কিন্তু এখন মন্দির ছাড়া অন্য ধর্মস্থান নির্মাণ প্রায় অসম্ভব। এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল কট্টর হিন্দুত্ববাদী। কট্টতার দিক থেকে কমবেশি হতে পারে। কিন্তু সকল রাজনৈতিক দল হিন্দুত্ববাদী ও আধিপত্যবাদী। এমনকি তথাকথিত চরম বামপন্থী দলগুলোও কম বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক নয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে ইসলামী রাষ্ট্র কিন্তু সেখানে কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত। সেদেশের ক্ষমতাসীন অভিজাত শ্রেণি কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ। পরিহাসের বিষয়, ভারতবর্ষের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের পৃষ্ঠপোষক! এমনকি অভিযোগ শোনা যায়, সেদেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করতে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করে এবং সাহায্য করে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here