টি নিউজ ওয়ার্ড: ‘রিপাবলিক টিভি’ টাকা দিয়ে টিআরপি কেনে! মুম্বই পুলিশ কমিশনার পরম বীর সিংহের দাবি। একটি সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই দাবি করে বসলেন মুম্বই পুলিশ কমিশনার পরম বীর সিং। তিনি বলেন খুব বড়োসড়ো ভাবে টিআরপি কেনার বাজার চালাচ্ছে রিপাবলিক টিভি। এটা একটি প্রতরনা এবং অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। ফরেন্সিক এক্সপার্টদের নিয়ে এই চক্রকে প্রতিহত করার তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। শুধুমাত্র রিপাবলিক টিভিই নয়, পাশাপাশি আরও কিছু চ্যানেলের নাম উল্লেখ করেন মুম্বই পুলিশ কমিশনার। এখনও পর্যন্ত এই মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিন মুম্বই পুলিশ কমিশনার পরম বীর সিং সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ফখত মারাঠি এবং বক্স সিনেমা নামে দুটি চ্যানেল এই প্রতারনামূলক কাজের সাথে যুক্ত ছিল। গ্রেফতার করা হয়েছে এই দুই চ্যানেল মালিককে।এই ঘটনায় হানসার অভিযোগে বিশ্বাসঘাত, জালিয়াতি করার আরোপের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মুম্বাই পুলিশ কমিশনার জানান, রিপাবলিক টিভিতে কর্মরত ব্যক্তিরা, প্রোমোটার এবং ডিরেক্টর এই চক্রের সঙ্গে শামিল থাকতে পারেন। এই নিয়ে তদন্ত চলছে। যাঁরা বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তাঁদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাঁদের ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল কিনা তাও জিজ্ঞাসা করা হবে।রিপাবলিক টিভির মালিক অর্ণব গোস্বামীকেও এই মামলার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
এ ধরনের বড় র্যাকেট কিভাবে কাজ করতো সে প্রসঙ্গে জানিয়ে মুম্বাই পুলিশ কমিশনার বলেন,”একটি বড় র্যাকেট ধরা পড়েছে। এই র্যাকেট টিআরপির। টিভি বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার। বিজ্ঞাপনের দর কেমন হবে তা নির্ভর করে চ্যানেলের টিআরপির ওপর। কোন চ্যানেল কি হিসেবে বিজ্ঞাপন পাবে তাও ঠিক করা হয় টিআরপির ভিত্তিতে। যদি টিআরপিতে কোনো রদ বদল হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়ে চ্যানেলের আয়ে। কিছু লোকের মাধ্যমে লাভার নিহত হন আর কিছু লোকের এর ফলে ক্ষতি হয়।”
তিনি আরো বলেন,”টিআরপি নির্ধারণ করার জন্য বিএআরসি নামক একটি সংস্থা রয়েছে। এই সংস্থা বিভিন্ন শহরে ব্যারোমিটার প্রতিস্থাপন করে। পুরো দেশে প্রায় ৩০ হাজার ব্যারোমিটার প্রতিস্থাপিত রয়েছে। মুম্বাইয়ে ১০ হাজার ব্যারোমিটার লাগানো হয়েছে। ব্যারোমিটার ইন্সটল করার দায়িত্ব মুম্বাইয়ে হানসা নামে একটি সংস্থার হাতে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করার সময় জানা গেছে কিছু পুরোনো কর্মচারী যারা আগে হানসায় কাজ করছিলেন তারা টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করছিলেন। তারা লোকেদের বলতেন যে আপনি ঘরে থাকুন কিংবা না থাকুন চ্যানেল অন রাখুন। এর জন্য পয়সা দেওয়া হতো। কিছু ব্যক্তি যারা অশিক্ষিত তাদের বাড়িতে ইংরেজি চ্যানেল অন করা হতো।”
পরমবীর সিংহ এরপর আরো বলেন,”হানসার প্রাক্তন কর্মচারীদের আমরা গ্রেফতার করেছি। এর ভিত্তিতেই তদন্ত অগ্রসর হয়েছে। দুজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ইতিমধ্যেই আদালতে পেশ করা হয়েছে এবং ৯ অক্টোবর পর্যন্ত হেফাজতে রাখা হয়েছে। এদের কিছু সঙ্গীর খোঁজ করছি। কিছু লোক মুম্বাইতেই আছে আর কিছু লোক মুম্বাইয়ের বাইরে আছে। চ্যানেলের হিসেবে এরা পয়সা দিতেন। একজন ধৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং ৮ লক্ষ টাকা ক্যাশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”
এদিকে, রিপাবলিক টিভির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। রিপাবলিক টিভির মালিক অর্ণব গোস্বামী বলেছেন, যে সমস্ত অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রিপাবলিক টিভি মুম্বাই পুলিশ কমিশনার পরম বীর সিংহের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানির মামলা দায়ের করবে বলে জানিয়েছে।