নিজস্ব প্রতিবেদন ; টি নিউজ ওয়ার্ল্ডঃ কাজী পেয়ারা চাষ। কেউ বলেন কাজী পেয়ারা আবার কেউ বলেন কেজি পেয়ার। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে কাজী পেয়ারা। পেয়ারটির আকার ক্ষেত্র বিশেষে এক কেজির কাছাকাছি বলে । কিন্তু না এটি ‘কাজী পেয়ারা’। এই পেয়ারটির উদ্ভাবক কাজী মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, তাঁর নামেই এ পেয়ারার নাম রাখা হয় ‘‘কাজী পেয়ারা’’ । স্বল্প সময়ে গাছে ফলন আসে, আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু বলে উফসি জাতের এই পেয়ারা জনগণের মাঝে বেশ পরিচিতি লাভ করে এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের নার্সারির মাধ্যমে গোটা দেশে কাজী পেয়ারার চারা বিতরণ প্রসারিত হয়। পাশাপাশি নার্সারিগুলোও চারা উৎপাদন ও বিতরণের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
মাটি: কাজী পেয়ারা চাষের জন্য হালকা বেলে থেকে ভারি এটেল মাটি উত্তম। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি দাঁড়িয়ে না থাকে, এমন জমি ভালো।
বংশ: বিস্তার বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা সবচেয়ে সহজ। কিন্তু বীজের গাছে মাতৃগাছের গুণ বজায় থাকে না এবং ফল অনেক সময় নিকৃষ্ট মানের হয়। অন্যদিকে অযৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করলে সে গাছের পেয়ারা মাতৃগাছের পেয়ারা হতে পার্থক্য হয় না। তাই বীজ দিয়ে বংশ বিস্তার না করে কলমের দ্বারা বংশ বিস্তার করাই উত্তম। অযৌন পদ্ধতির মধ্যে গুটিকলম, পাশর্্ব জোড় কলম, বর্মচোখ কলম, শাখা কলম ও মুল কলম দ্বারা পেয়ারার বংশ বিস্তার করা যায়। তবে বাংলাদেশে গুটি কলমই বহুল প্রচলিত।
গর্ভতৈরি ও সার প্রয়োগ
চারা লাগাবার জন্য ৬০ সে.মি. প্রস্থ এবং ৪৫ সে.মি. গভীর গর্ত করে প্রতি গর্তে নিন্ম লিখিত সার প্রয়োগ করা উচিত।
১। পচা গোবার অথবা আর্জনা পচা সার ১০/১২ কেজি
২। সরিষার খৈল ১ থেকে ২ কেজি
৩। ট্রিপল সুপার ফসফেট ঙ্গ থেকে ১ কেজি
উপরোক্ত সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করে ৮ হতে ১০ দিন রেখে দিতে হবে। চারা লাগাবার পর চারাটিরকে একটি শুক্ত খুটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে যেন বাতাসে চারার কোনো ক্ষতি না হয়।
বিষয়টি বোঝার জন্য আরো পরিস্কার ভাবে বলছি।
দুপুরে সূর্য যখন খাড়া আমাদের মাথার উপরে থাকে গাছের সেই ছায়াটি মাটির যতটুকু জায়গা জুড়ে পড়বে ততটুকু জায়গার মাটির সাথে সার মিশিয়ে দিতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্যা
বাঁচার জন্য মানুষের যেমন খাদ্যের প্রয়োজন টিক তেমনি গাছেরও খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি , জুলাই ও অক্টোবর মাসে তিন কিস্তিতে গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। সার একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে যতদূর পর্যন্ত গাছের ডালপালা বিস্তার করে সে এলাকার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। নিন্মের ছবে বিভিন্ন বয়সের গাছের সারের পরিমাণ দেখানো হল-
পঁচা গোবার ১০- ২০ কেজি
ইউরিয়া ২০০-৩০০ গ্রাম
টিএসপি ২৫০-৩০০ গ্রাম
মিউরেট অব পটাশ ২৫০-৩০০গ্রাম
গাছের গোড়া থেকে মাঝে মাঝে আগাছা পরিস্কার করা এবং গোড়ার মাটি ভেঙ্গে দেয়া দরকার। খরার সময় পানির ব্যবস্থা এবং খড় বা কচুরিপানা দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি ঢেকে দেয়া উচিত, যেন মাটিতে রস বেশী দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে এবং আগাছা জন্মাতে না পারে।
গাছটি সুন্দরভাবে জন্মাতে হলে ছোট অবস্থাতেই দৈহিক গঠন ও পরে অঙ্গ ছাঁটাই অত্যাবশ্যক। দৈহিক গঠন মজবুত করতে প্রথমে গাছটিকে সোজা বাড়তে দিতে হবে এবং মাটি থেকে ৬০ সে.মি. উঁচুতে কেটে একটি শক্ত কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। তারপর সেই কাটা অংশ থেকে নতুন শাখা বের হলে মাত্র তিনটি শাখা তিনদিকে বাছাই করা উচিত। পরের বছর আবার সেই তিনটি শাখা ৪৫ সে.মি দূরে কেটে দুটি প্রশাখাকে বাড়তে দিতে হবে। এভাবে প্রথম কয়েক বছর গাছটিকে কেটেছেঁটে সুন্দর আকার ধারণ করাতে হবে যাতে গাছ খুব সহজেই তার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। অন্যদিকে অঙ্গ ছাটাই বলতে মরা, রোগাক্রান্ত ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করা বুঝায়। সাধারণত বয়স্ক গাছের ফল সংগ্রহের পর জুলাই/ আগষ্ট মাসে অঙ্গ ছাঁটাই করা হয়।
রোগবালাই ও পোকামাকড়
কাজী পেয়ারার রোগবালাই নেই বললেই চলে। পোকামাকড়ের মধ্যে ফল ও কাণ্ড খননকারী পোকাই প্রধান। এ পোকা প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ সিস ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে গাছে ছিটিয়ে দমন করা যায়। এছাড়া পাখি ও বাদুর পেয়ারার যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। গাছে টিন পিটিয়ে এর উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
ফল সংগ্রহ
কাজী পেয়ারা বছরে তিনবার ফল দিয়ে থাকে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যথাক্রমে মার্চ, আগষ্ট ও অক্টোবর মাসে ফুল আসে এবং জুলাই, ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারী/ মার্চ মাসে সেই ফল থাকে। প্রথম ও তৃতীয় বারের তুলনায় দ্বিতীয় বারের ফলের সংখ্যা খুবই কম। প্রথম ও তৃতীয় বারে ফল বেশী আসে এবং ফলের আকার ছোট হয়ে যায় বিধায় ফঠ ছোট থাকা অবস্থাতেই কেটে পাতলা করে দেয়া উচিত। প্রতি থোকায় একটার বেশী ফল রাখা কোনোক্রমেই উচিত নয়। কলমের চারা ১/২ বছর পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে। পেয়ারা পাকার সময় হলে সবুজ রং বদলে গিয়ে আস্তে আস্তে হলদে বেশী পাকতে দেয়া উচিত নয়। কারণ বেশী পাকা পেয়ারা খেতে মোটেই সুস্বাদু নয় এবং বাজারজাতকরণে কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।