নিজস্ব সংবাদদাতা টি নিউজ ওয়ার্ল্ডঃ- পশ্চিমবঙ্গে SBI ব্যাঙ্কে যাবতীয় ফর্ম হিন্দি ভাষায়। জলঙ্গী থানার অন্তর্ভুক্ত “স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়র” শাখায় যাবতীয় ফর্ম ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায়। বাংলার কোন অস্তিত্বই নেই ফর্মে। অথচ জলঙ্গী থানার একশো শতাংশ গ্রাহক বাংলা ভাষী। শুধু বাংলাভষী নয় তাদের মধ্যে ৯৯% মানুষ হিন্দি লেখা পড়তেও জানে না। এই নিয়ে T News World গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রাহকরা জানায় হিন্দি ভাষায় ফর্ম থাকার জন্য, ফর্মে কি লেখা আছে কিছুই বুঝতে পারিনা। এই জন্য অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। আবার ফর্মে একটু ভুল লেখা হলেইতো, সংশোধন করে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করা । গ্রাহকদের অধিকাংশ দাবী করেছেন ‘আমার যেহেতু পশ্চিমবাংলার মানুষ আমাদের মাতৃ ভাষা বাংলা এতএব আমাদের যাবতীয় ফর্ম বাংলা হওয়া চাই। আবার অনেকই দাবী করেছেন ইংরেজি থাকার পাশাপাশি বাংলা থাকতেই হবে। কিন্তু পশ্চিমবাংলার অফিসে ইংরেজি/হিন্দি ফর্ম থাকবে, বাংলার কোন অস্তিত্ব থাকবে না, এটা মেনে নেওয়া যাবে না। বরং এটা বাংলা ভাষার উপরে গভীর চক্রান্ত করা হচ্ছে, আমাদের সচেতন হতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে এখন অনেকেই মনে করছেন হিন্দি ভাষার আগ্রাসন হচ্ছে এবং এর একটি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে – ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলার পক্ষে ক্যাম্পেইন চলছে, আর প্রতিবাদ হচ্ছে রাস্তার বিক্ষোভ-জমায়েতে।
কলকাতার কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সামনে ২০১৯ এ এরকমই একটা জমায়েত হয়েছিল ভাষা-সংস্কৃতি কর্মীদের, যেখানে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হয়েছে।
ফেসবুককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি অবশ্য শুধুই সামাজিক মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তারা পথেও নামে।
সংগঠনটির প্রধান, অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জীর কথায়, “পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু সাম্রাজ্যবাদ প্রথমেই আগুনে বাঙালিদের ঝলসে দিয়েছিল, তাই সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার বাঙালি লাফিয়ে উঠেছিল।”
“কিন্তু এখানে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ আমাদের ফুটন্ত জলে সেদ্ধ করেছে ধীরে ধীরে, যাতে একটা সময়ে আমরা স্থবির, বলহীন হয়ে পড়ি।”
তিনি আরও বলেন, “কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা টের পেয়েছে যে জনসংখ্যার বিন্যাসে বদল ঘটিয়ে পুঁজি, বাজার, চাকরী আর জমি – এগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে বহিরাগতদের দ্বারা, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে বাঙালিদের। এই অবস্থাটা আটকাতেই আমাদের লড়াই।”
আরেকজন অ্যাক্টিভিস্ট শাশ্বতী নাথের কথায়, “যে ষড়যন্ত্র চলছে বাঙালিদের বিরুদ্ধে – কখনও সেটা আসামে এনআরসি-র মাধ্যমে, কখনও হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, তখন যদি বাঙালিরা নিজেদের জাতিগত পরিচয়, ভাষাগত পরিচয়কে হাতিয়ার করে রুখে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে বাঙালিদের জন্য কঠিন সময় আসছে।”