একজন কৃষ্ণাঙ্গ খুনের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে আমেরিকা। একটা কথা খুব স্পষ্টভাবে বলে রাখা দরকার আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ খুবই সাধারণ ব্যাপার এবং পুরো আমেরিকায় এই ব্যাপারটা খুবই প্রকট।
সম্প্রতি আমেরিকার মিনিয়াপোলিস শহরে জর্জ ফ্লয়েড নামে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যু হয় পুলিশের হাতে। এই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর ভিডিও আগুনের গতিতে পুরো আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। আর কিছু লোক এই মৃত্যুর ভিডিও দেখে পুলিশের হাতে একজন কৃষ্ণাঙ্গের খুন বলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রাস্তায় নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গত দুই দিনে লস অ্যাঞ্জেলেস সহ আমেরিকার অন্যান্য বেশ কয়েকটি শহরেও জনতা- পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ হয়। ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং আশেপাশের দোকানে ও শপিংমলে ভাঙচুর চালায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ মাটিতে ফেলে রেখেছে এবং তার গলা হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সেই কালো ব্যক্তিটি কষ্টে কাতরাচ্ছে এবং বলতে শোনা যাচ্ছে সে নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা তার পরেও পুলিশ তাকে সেই ভাবেই ধরে থেকে যায় এবং একসময় সে কালো ব্যক্তিটি নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় এবং স্পষ্ট হয়ে যায় যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।জনতার চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত সেই পুলিশ অফিসার কে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তার নামে একটি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।
এতকিছুর পরেও আমেরিকায় বিক্ষোভ থামার যেন কোন লক্ষনই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে কালো মানুষদের এই বিক্ষোভ দীর্ঘদিনের বঞ্চনার বিক্ষোভ। আমেরিকার সমাজে সব সময় কালোদের একটু অন্যভাবে দেখানো হয়, সব সময় তাদেরকে ক্রিমিনাল অথবা কোন অসামাজিক কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। দেশে কোনো অঘটন ঘটলেই সেটাকে কালো মানুষের সাথে জুড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের একটা পুরনো অভ্যাস।
মৃত জর্জ ফ্লয়েডের পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে যে সে মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে দীর্ঘদিন একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতো। স্থানীয় পুলিশ এক প্রতারণা মামলায় অন্য একজনকে গ্রেপ্তার করতে এসে ভুল করে জর্জ ফ্লয়েডের সঙ্গে বচসায় জড়ায়ে পড়ে, হাতাহাতি হয় এবং শেষ পর্যন্ত সে ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে যায়।
আমেরিকান সরকার বিক্ষোভ মেটানোর জন্য বিশেষ বিশেষ জায়গায় রাতভর কার্ফু জারি রেখেছে এবং এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক এর বেশি লোক গ্রেপ্তার করেছে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে আমেরিকার প্রায় আটটি প্রদেশে ন্যাশনাল গার্ড নামানো হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে বিক্ষোভ ঠেকাতে লোকেদের উপর দেদার লাঠি চার্জের পাশাপাশি লঙ্কাগুঁড়ো, রাবার বুলেট এবং কাঁদানো গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।