নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে মুক্ত বাণিজ্য নীতির অবাধ প্রবেশ ঘটেছে সারা বিশ্বে, তাই এমনই একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ভারত ও আমেরিকা পরস্পর “বাণিজ্য চুক্তির” দিকে এগোচ্ছে। আমেরিকার সাথে প্রাথমিকভাবে, বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত ভারত। সেই চুক্তি ‘প্রায় তৈরি’-ও হয়ে আছে। তবে আগামী নির্বাচনের আগে ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমেরিকার উপর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ছাড়া হয়েছে। মঙ্গলবার এমনই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।
পীযূষ গোয়েল এঁর বক্তব্য, ভবিষ্যতে বৃহদাকারে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ভিত্তি’ হবে এই প্রাথমিক চুক্তি। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় দুগ্ধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্ষেত্রে মার্কিন সংস্থাকে বাড়তি ছাড় দেওয়ার পরিবর্তে ভারতকে আমেরিকায় বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও আরও একাধিক জরুরি বিষয় রয়েছে সেই চুক্তিতে।
যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময়ই দু’পক্ষ ‘আদর্শগতভাবে’ সেই চুক্তি সই করতে পারত বলে মনে করেন গোয়েল। তিনি জানান, কয়েকটি খুচখাচ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সেই যাত্রায় বাণিজ্য চুক্তি অধরাই থেকে যায়। কিন্তু তারপর দু’দেশই করোনাভাইরাস মহামারীর নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় মনোযোগ দেওয়ায় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দরকষাকষির প্রক্রিয়া ধাক্কা খায়। ভারতের প্রথম দিকের লকডাউন প্রসঙ্গ তুলে গোয়েল বলেন, ‘ওই সময়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়েছে।’ তা সত্ত্বেও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আসলে এই প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত অধিকাংশ বিষয়গুলির সমাধান করে নিয়েছি।’ গোয়েল বলেন, ‘আমরা ভারতের তরফে বিশ্বাস করি যে এটা (বাণিজ্য চুক্তি) উভয় দেশের পক্ষেই ভালো হবে। তা আরও বৃহদাকারে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য আলোচনা শুরুর দরজা খুলে দেবে।’ একইসঙ্গে প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তির উপর ভিত্তি করে ইন্দো-মার্কিন ‘কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর হবে’ বলে আশাপ্রকাশ করেছেন গোয়েল।
দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সত্ত্বেও বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি দু’দেশ। ভারতের দুগ্ধজাত দ্রব্য ও পোলট্রি ক্ষেত্রে ভারতীয় বাজারে প্রবেশের অনুমতি চায় মার্কিন ট্রাম্প সরকার। পাশাপাশি আমেরিকার ইচ্ছা, সীমিত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসার সরঞ্জামের দামের যে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে ভারত, তা তুলে নেওয়া হোক। অন্যদিকে ভারতে চেয়েছিল, এদেশ থেকে মার্কিন মুলুকে রফতানি করা ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়ামের উপর কম শুল্ক চাপানো হোক। ভারতের সফরের সময় তা নিয়ে ফলপ্রসূ কোনও সিদ্ধান্ত হবে বলে প্রত্যাশার পারদ চড়েছিল। কিন্তু সফর শুরুর আগেই ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ যাত্রায় হচ্ছে না বাণিজ্য চুক্তি। যাইহোক নতুন করে ভারত-আমেরিকার এই “বাণিজ্য চুক্তি” স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশই উপকৃত হবে, এমনটি মনে করা হচ্ছে এবং ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটা দীর্ঘ ও দৃঢ় বন্ধন তৈরি হবে যা বিশ্ব রাজনীতিতেও প্রভাব পড়বে বলে অনেকে ধারণা করছেন।