টি নিউজ ওয়ার্ল্ডঃ যেভাবে শসা চাষে সফলতা আসে।
শসা বাংলাদেশের প্রধান ও জনপ্রিয় সবজি সমূহের মধ্যে অন্যতম। শসা প্রধানত সালাত ও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শসার প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে ৯৬% জলীয় অংশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ২.৬ গ্রাম শ্বেতসার, ১৮ মিঃ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.২ মিঃ গ্রাম লৌহ, ক্যারোটিন ৪০ মাইক্রোগ্রাম, খাদ্যপ্রাণ সি ১০ মিঃ গ্রাম রয়েছে।
চাষাবাদ পদ্ধতি:
মাটি ও জলবায়ু: উর্বর দো-আঁশ মাটি ও অম্লক্ষারত্ব ৫-৫-৬.৮ শসা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ২৫-৩০ সেঃ গড় তাপমাত্রায় শসা সবচেয়ে ভাল জন্মে।
জীবন কাল: সাধারণত জাত ভেদে ৭৫ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শসার বীজ বপন করা ভাল।
বীজের হার: এক শতকে-২-৩ গ্রাম, একর-প্রতি-২০০-৩২৫ গ্রাম, হেক্টর-প্রতি-৫০০-৮০০গ্রাম।
বীজ বপন: প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ লাগাতে হয়৷ বীজ একদিন ও একরাত ভিজিয়ে-লাগানো ভালো।
জাত নির্বাচন: বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু জাতের শসার চাষ হচ্ছে এর মধ্যে বিদেশী জাতের অধিকাংশই হাইব্রিড। বিএডিসি ২টি স্থানীয় জাত উৎপাদন করে থাকে বারোমাসি ও পটিয়া জায়ান্ট নামে। এছাড়াও বাংলাদেশী কয়েকটি বেসরকারী সবজি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই অনেকগুলো বিশুদ্ধ জাত ও হাইব্রিড (সংকর জাত) শসার জাত বাজার জাত করেছে। স্থানীয়ভাবে গ্রীন কিং, শিলা, আলাভী, বীরশ্রেষ্ঠ, শীতল, হিমেল, গ্রীন ফিল্ড, সানটং-৪, পান্ডা, ভেনাস, মাতসুরি, বাশখালী, মধুমতি, নওগা গ্রীন, লাকি-৭ ইত্যাদি জাত চাষ করা হয়।
জমি তৈরি: বার চারেক চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নেওয়া হয়৷ আগাছা সম্পূর্ণ পরিষ্কার কেও ক্ষেত সমতল করে নিতে হবে৷
সার প্রয়োগ: শসার বেশি ফলন ও গাছের বৃদ্ধির জন্য নিয়মমতো সার দিতে হবে। প্রতি মাদায় পচা গোবর, ছাই, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি মিলিয়ে ৫-৬ কেজি, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০-৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোমতো মিশিয়ে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পর পর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন: শসা পানির প্রতি খুব সংবেদশীল। মাটিতে রস কম থাকলেই সেচ দেয়া প্রয়োজন। তবে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেয়া উত্তম। খেয়াল রাখবেন শসা গাছের মাটি শুকিয়ে গেলে ফুল ঝরে যায় এবং গাছ ঢলে আসে। আবার বর্ষাকালে ক্ষেতে পানি জমে থাকলেও শসার জন্য ক্ষতিকর। বৃষ্টি বেশি হলে সেচ দেয়ার দরকার নেই। কয়েকদিন পানি জমে থাকলেই গাছের গোঁড়া পচে মরে যেতে পারে। সেজন্য নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
চারা উৎপাদন: নার্সারী বা বীজ তলায় চার তৈরী করে জমিতে লাগানো উত্তম। এক্ষেত্রে ৫০ঃ৫০ অনুপাতে পচা গোবর বা কম্পোষ্ট ও মাটি একত্রে মিশিয়ে ৬ী৮ ইঞ্চি সাইজের পলিইথিলিয়ানের ব্যাগে ভরতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে।
রোপণ: চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে পলিব্যাগ সরিয়ে মাদায় চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি চারা থাকলে মাঠে লাগানোর ৬-৭ দিন পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল চারাটি তুলে প্রতি মাদায় ১ টি করে চারা রাখতে হবে।
রোপণের দূরত্ব: ১.৫x১.৫মিঃ
বাউনি দেওয়া: তারের নেট অথবা সুতলী অথবা বাশের কঞ্চির সাহায্যে বাউনি দিতে হবে। বাউনি/মাচা নিকাশ নালার উভয় পাশের ২ বেড বরাবর ১টি দিলে চলবে।
সংগ্রহ: শসার জাত ভেদে বীজ বোনার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। হেক্টর প্রতি ১০-২০ টন শসা সংগ্রহ করা যেতে পারে।