করোনা ভাইরাসের মধ্যেও একের পর এক কেন গ্রেফতার ? জোরদার আন্দোলনে নামছে সিএএ-এনআরসি বিরোধীরা!

0
Spread the love
নিজস্ব সংবাদদাতা, টিনিউজ ওয়ার্ল্ড, কলকাতা: এতদিন দেশের স্বার্থে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশ ব্যাপী চলতে থাকা শাহীনবাগ আন্দোলন বন্ধ রাখেন আন্দোলনকারীরা। লকডাউনের প্রথমে কিছু জায়গায় প্রতীকী আন্দোলন হলেও পরে পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের মধ্যেও দিল্লী, উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন জায়গায় সিএএ, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। আর তাই আবার পথে নামতে যাচ্ছে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনকারীরা। সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সিএএ বিরোধী নেতারা বৈঠক করেছেন অনলাইনে। দলিত, সংখ্যালঘু ও ধৰ্মনিরপেক্ষ মানুষ বলছেন, আন্দোলন বন্ধ দেখে এই দুর্দিনেও গ্রেফতার করা হচ্ছে যা অন্যায়। দেশের বড় বড় সমাজ কর্মীরা এই নিয়ে সরব হয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ জুটি র নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। গড়ে ওঠে ধর্ণা মঞ্চ বা শাহীনবাগ। করোনা ভাইরাস জনিত লকডাউনের কারণে সেই আন্দোলন বন্ধ। সোশ্যাল সাইটে এই নিয়ে আলোচনা হলেও জমায়েত নিষিদ্ধের কারণে ও করোনা ভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত করতে পথে নেমে আন্দোলন করেনি বলে জানা গেছে। কিন্তু সিএএ বিরোধীদের আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, করোনা ভাইরাস জনিত রোগে দেশ যখন লকডাউনে আছে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে বিভিন্ন আন্দোলনকারী সমাজ কর্মীদের নামে মামলা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাই শারীরিক দূরত্ব মেনেই পথে নামতে হবে। কলকাতায় সিএএ বিরোধী একাধিক আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা সাদাব মাসুম টিডিএন বাংলাকে জানান,” অনলাইনে আন্দোলন হচ্ছে কিন্তু সব সময় অনলাইনে প্রতিবাদ হবেনা। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স মেনে দরকারে পথে নামবো। আন্দোলন না চললে বিপদ, কেননা লকডাউনের সময় সিএএ, এনআরসি বিরোধী সমাজ কর্মীদের গ্রেফতার করছে। এটা অত্যন্ত নিম্ন কাজ,জোরালো প্রতিবাদ হওয়া দরকার।”

কিছুদিন আগে সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমার, দলিত নেতা জীগনেশ মেবানি, জামিয়ার ছাত্রী আয়েশা রেন্না, এসআইও দায়িত্বশীলরা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সিএএ বিরোধী পরিচিত নেতাদের একটি অনলাইন বৈঠক হয়। সেখানে লকডাউনে আন্দোলন বন্ধ দেখে সমাজকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

এদিকে সোশ্যাল সাইট ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে নো এনআরসি মুভমেন্ট, ইন্ডিয়া এগেনিস্ট সিএএ-এনআরসি-এনপিআর প্রভৃতি গ্রুপে নিয়নিত প্রতিবাদ চলছে। দেশজুড়ে প্রায় ২৭৫টি শাহীনবাগ তৈরি হয়েছিল। বাংলায় ১৫টি ধর্ণা চলছিল। লকডাউনের ফলে তারা ধর্ণা মঞ্চ ছেড়ে ত্রাণের কাজ করছে। তবে পার্কসার্কাস আন্দোলনের একজন নেতা বলেন, লকডাউন হচ্ছে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে। কিন্তু এই সময় আন্দোলনকারীদের নামে মামলা দুর্ভাগ্যজনক। এসব বন্ধ হওয়া উচিত, আর নাহলে প্রতিবাদ করবো।

জয়ভীম ইন্ডিয়া নেটওয়ার্কের নেতা শরদিন্দু উদ্দীপন জানান, “লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে দেশে যা হচ্ছে তার প্রতিবাদ করতে হবে। সিএএ মতুয়াদের জন্য একটা ধাপ্পা। প্রতিবাদ করতে হবে। লকডাউন উঠলেই বহুজন মানুষ আরও জোরালো আন্দোলন করবে।”

সিএএ-এনআরসি বিরোধী নেতা মানিক ফকির নিয়মিত সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে যাচ্ছেন। তাঁর মতে, দীর্ঘ সাতের বছর ধরে বিজেপি উদ্বাস্তু হিন্দুদের বলে আসছে তারা শরণার্থী আর মুসলমানরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। অথচ ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে বিজেপি দেশভাগে বলি হওয়া হিন্দুদেরই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। সুতরাং কেন্দ্রে যে সরকারই আসুক সংবিধান অনুযায়ী তাকে এন আর সি করতেই হবে। অনেকের ধারনা এন আর সি আন্দোলন বুঝি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। আমাদের মতে যারা এই ভুলের স্বর্গে বাস করছেন, তাদের ঘুম খুব শিগগিরই ভাঙবে। সি এ এ ২০১৯ হিন্দুদের ভাঁওতা আর মুসলমানদের আতঙ্ক ধরানোর আইন। বরং বলা যায় সি এ এ,এন আর সি,এন পি আর কোনোটাতেই আইনগত ভাবে মুসলিমদের তেমন কোনো ভয় নেই। বরং এই আন্দোলন থেকে মুসলমানরা সরে দাঁড়ালে ভারতের মতুয়া সমাজ নিশ্চিন্ন হয়ে যাবে। তাই লকডাউন উঠলেই আমরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব এন আর সির বিরুদ্ধে। সিএএ উদ্বাস্তু মতুয়াদের জন্য একটা ধোকা। কিন্তু আমরা একজন উদ্বাস্তুকে ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে দেবো না।” জানা গেছে, লকডাউন উঠলেই আন্দোলন হবে তবে দীর্ঘদিন লকডাউন চললে এবং যদি গ্রেফতারী বন্ধ না হয় তবে এরই মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে আন্দোলন হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here