তড়িঘড়ি জেল থেকে মুক্ত করা হলো আরামবাগ টিভির সম্পাদককে

0
Spread the love

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা:-  কলকাতা হাইকোর্টের নজিরবিহীন নির্দেশে অবশেষে জেল থেকে জামিনে মুক্ত হলেন আরামবাগ টিভির সম্পাদক সফিকুল ইসলাম। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, এদিন বিকেল ৪ টের মধ্যে সফিকুল ইসলামকে জেল থেকে মুক্ত করতে হবে। আদালতের নির্দেশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই, সফিকুলকে জেল মুক্ত করার জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করে দেয় পুলিশ প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশ মতো বিকেল চারটায় জেল থেকে ছাড়া পান সফিকুল।

উল্লেখ্য, করোনা আবহে বেশ কিছু খবর সম্প্রচারিত হয় আরামবাগ টিভিতে। যে খবরগুলো সরকার বিরোধী ছিল। সেই সঙ্গে পুলিশের জনবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল আরামবাগ টিভিতে। যার কারণে, আরামবাগ টিভির সম্পাদক সেখ সফিকুল ইসলাম, তার স্ত্রী আলিমা খাতুন ও সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে গ্রেফতার করেছিল আরামবাগ থানা। অভিযোগ, মিথ্যা কেসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সফিকুল – সুরজদের। সেই কারণে, তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অভিযোগগুলি চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন তারা। এই পরিস্থিতিতে সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৬টি কেস দেওয়া হয়।প্রত্যেকটি অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কেসে কলকাতা হাইকোর্টর বিচারপতি দেবাংশু বসাক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে বলেছিলেন এদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। এই অবস্থায় সফিকুল, হাইকোর্টের নির্দেশে বাকি সমস্ত মামলায় জামিন পেয়ে গত ১৫ আগস্ট জেল থেকে যখন মুক্তি পাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে পুরানো কেসে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। এর জন্য কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হতে চলেছে। এই অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া মামলায় জামিনের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সফিকুল। এদিন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চে সফিকুল ইসলামের জামিন মামলার শুনানি ছিল। সেখানে শুনানির সময় সফিকুলের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় আদালতকে জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সফিকুলকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। যা আদালত অবমাননার সমান। এই মামলায়,তদন্তের স্বার্থে সফিকুল পুলিশের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করেছে। তার পরেও বেআইনিভাবে সফিকুলকে গ্রেফতার করেছে আরামবাগ মহিলা থানার পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে, সফিকুলকে যে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা যাবে না, বিচারপতি দেবাংশু বসাকের সেই নির্দেশ আদালতের সামনে তুলে ধরেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে সফিকুলের জামিনের বিরোধিতা করার জন্য আদালতে পুলিশের পক্ষে সওয়াল করতে উঠেন রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। এডভোকেট জেনারেলকে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, এদিন বিকেল চারটের মধ্যে জেল থেকে মুক্ত করতে হবে সফিকুলকে। এই অর্ডার যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা, তা আজ মঙ্গলবার আদালতে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই অর্ডার মোতাবেক, মুক্ত করার জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করে দেয় আরামবাগ পুলিশ। আদালতের নির্দেশ মতো বিকেল চারটের সময় জেল থেকে মুক্ত করা হয় সফিকুলকে। এই প্রসঙ্গে, কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, দিনে দিনেই জেল থেকে মুক্ত করার নির্দেশ সাম্প্রতিককালে কলকাতা হাইকোর্টে হয়নি। সফিকুলকে জেলমুক্ত করার নির্দেশ কার্যত ঐতিহাসিক রায় বলেও মনে করছেন আইনজীবীরা। সফিকুলের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, হাইকোর্ট এই মামলার নির্দেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে কোনো তদন্ত ছাড়া যদি সফিকুল কে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে আদালত তা বুঝে নেবে।
জেল থেকে বেরিয়ে সফিকুল ইসলাম বলেন,

“আমি তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো জেল থেকে মুক্তি পেলাম। কারণ যেভাবে, আমাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, যেকোনো পরিবারের কাছে খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি  জেল থেকে মুক্ত হয়ে আংশিকভাবে খুশি হয়েছি। সম্পূর্নভাবে খুশি সেদিনই হব, যেদিন সাংবাদিক হিসেবে মুক্তকণ্ঠে কথা বলার সুযোগ পাব।”

সফিকুল ইসলামের মুক্তিতে, খুশি সাংবাদিকজগতও। এভাবে যাতে আর কোনো সাংবাদিককে, অযথা মিথ্যা  কেসে হেনস্তা না করা হয়, তার আওয়াজ উঠেছে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত, ৮ দিন আগেই জেল থেকে মুক্ত হয়েছে সফিকুল এর স্ত্রী আলিমা খাতুন ও সাংবাদিক সুরজ আলি খান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here