নিজস্ব সংবাদদাতা :-আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই কিডনির ব্যাপারে অমনোযোগী। আর এই অমনোযোগীতার কারণে বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারের চেয়ে কিডনি রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। বর্তমান সময়ে কিডনির বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে কিডনি পাথরের রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। আজকের দিনে আমরা আলোচনা করব কিভাবে সহজেই কিডনির যত্ন নেওয়া যায় এবং কিভাবে খুব সহজেই আপনারা কিডনি পাথর থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।
প্রথমেই একটা কথা স্পষ্ট ভাবে বলে রাখা দরকার, যখন আমরা খাওয়ার সময় কোন পাথর খাই না অথবা কোনো শক্ত জিনিস গলধঃকরণ করিনা তাহলে কিভাবে পেটের ভিতর হঠাৎ করে কিডনির মাঝে পাথরের আবির্ভূত হয়ে যাচ্ছে? আশ্চর্য ব্যাপার! না আশ্চর্যের কিছু নয়। আপনার কিডনির ভেতরে পাথরের আবির্ভাব হঠাৎ করে হয়নি বরং আপনার দীর্ঘদিনের কিছু খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু কুঅভ্যাসের কারণে হয়েছে। এই কুঅভ্যাস গুলির মধ্যে অন্যতম হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করা।
পাথর গঠিত হয় কিভাবে
কিডনির ভেতর পাথর কিভাবে গঠিত হয় তা একটা ছোট্ট উদাহরণের মাধ্যমে খুব সহজে আপনাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করব। যদি আপনারা সমুদ্র থেকে একটি পাত্রে জল নিয়ে, সেটা উত্তপ্ত করতে থাকেন তাহলে একটা সময় পাত্রের সমস্ত জল বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে এবং পাত্রে শুধুমাত্র সাদা লবণ পড়ে থাকবে। কয়েকদিন সেটাকে ওই অবস্থায় রেখে দিলে সেটা সাদা পাথরে পরিণত হবে। যখন আপনারা সমুদ্রের জল নিয়ে আসেন তখন কিন্তু সেখানে পাথর ছিল না সেখানে কিছু লবণ জলের সঙ্গে মিশে ছিল। জল উবে যাওয়ার পর শুধু সাদা লবণ পড়ে থাকল পরে তা পাথরে পরিণত হলো। অনেকটা ঠিক এরকম ঘটনা আমাদের শরীরে ঘটে যখন আমরা বিভিন্ন রকমের খাবার খায়।
বিভিন্ন খাবার ও ফলমূলের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রতিদিন ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ইউরিক অ্যাসিড জমা হচ্ছে।পরবর্তীতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান জল না থাকার কারণে অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করার কারণে এগুলি কিডনিতে গিয়ে ধীরে ধীরে জমা হতে থাকে এবং একসময় পাথরে পরিণত হয়। অথচ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে এইসব অক্সালেট এবং শরীরের ইউরিক অ্যাসিড জলের মাধ্যমে ধুয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে খুব সহজে বেরিয়ে যায়।
রোগের উপসর্গ:-
কিডনিতে পাথর হলে শুরুতেই এর কোন উপসর্গ সহজে চোখে পড়ে না। তবে ধীরে ধীরে এর বিভিন্ন উপসর্গ আমাদের সামনে প্রকট হয়ে ওঠে।
প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া।
প্রস্রাবের রং হলুদাভ না হয়ে কালচে লাল হয়। কারণ এতে রক্ত মিশে থাকে।
তলপেটে অসহ্য ব্যথা।
বারবার প্রস্রাব করা ও প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া।
কিডনির পাথর থেকে বাঁচার উপায়:-
কিডনির পাথর থেকে বাঁচার ব্যাপারে সব বিশেষজ্ঞই একমত যে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে। যখন প্রয়োজন পড়বে প্রস্রাব করে নিতে হবে। প্রস্রাব চেপে রাখা যাবে না।জল পর্যাপ্ত পরিমাণে না পান করার কারণে এবং প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে দূষিত পদার্থ গুলো কিডনিতে জমা হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে এই দুটি জিনিস কে নিয়মিত অনুসরণ করলে কিডনির পাথর থেকে খুব সহজেই মুক্তি লাভ করা যেতে পারে।
কিডনির পাথর থেকে বাঁচতে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ লিটার জল পান করা দরকার। কমলালেবু ও পাতি লেবু কিডনির পাথর গলিয়ে দিতে সক্ষম। সুতরাং কিডনির পাথরের ক্ষেত্রে লেবু খুবই উপকারী। এছাড়া শশা, তরমুজ ও কচি ডাবের জল কিডনির বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।